আগামী দিনের বাংলাদেশ গঠনে একুশের চেতনা ধারণ করতে হবে হৃদয়ে।

একুশ শুধু একটা সংখ্যা বা তারিখ নয়, বরং এটা সমগ্র বাঙ্গালী জাতির এক সত্তার নাম। সমস্ত আবেগ উজার করে দিয়েও এই দিনটিকে ভোলা যাবেনা, কখনোই না।

প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দুরুত্বের দুটো ভূখন্ডের ২ ভাষার জাতিসত্তাকে নিয়ে যে পাকিস্তান রাষ্টের জন্ম হয়েছিল তার শুরু থেকেই ছিল ভাষাগত বিতর্ক। মূলত ধরেই নেওয়া হয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বীজ বপন হয়েছিলো ঠিক ওই সময় থেকেই। মূলত ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পূর্বেই ভাষা নিয়ে বিতর্কের জন্ম হয়।

মুলত চল্লিশ এর দশক থেকেই সাহিত্যিকগণ এই বিষয়টা নিয়ে আলোকপাত করেন। ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন ও আহমদ রফিক তাদের ভাষা আন্দোলন-ইতিহাস ও তাৎপর্য বইয়ে লিখেছেন ” প্রথম লড়াইটা প্রধানত ছিল সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ।( সোর্স- বাংলা পিডিয়া). পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে বাংলা-উর্দু বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। তখনকার মিল্লাত পত্রিকায় এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিলো,” মাতৃভাষার পরিবর্তে অন্য কোন ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা রুপে বরণ করার মত বড় দাসত্ব আর কিছু থাকিতে পারে না।

সেই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ( ৮ ফাল্গুন, ১৩৫৯) কিছু টকবগে তরুণের রক্তিম রক্তের বিনিময়ে আমরা যে ভাষাকে নিজের জাতিসত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে লাভ করেছি তা শুধু আমরা নিজেদের মধ্যেই ধারণ করি নাই বরং ছড়িয়ে দিয়ে সক্ষম হয়েছি সমগ্র বিশ্বে। যার স্বীকৃতিস্বরুপ ২১ ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস এর মর্যাদা।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস সম্মেলনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সারা বিশ্বব্যাপী দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়। এটা একজন বাঙ্গালী হিসাবে সত্যি আমাদের গর্বের বিষয়।

এখন আসি মূল কথায়, একবিংশ শতাব্দীর ঠিক এই সময়টায় দাড়িঁয়ে আমরা যদি নিজেকে প্রশ্ন করি, ভাষার মর্যাদা কতটুকু ধরে রাখতে পেরেছি? তাহলে এর কতটুকু উত্তর দিতে সক্ষম আমরা বা নিজেকে কতটুকু তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।

বিষয়টা হলো, ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমরা আমাদের ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই। তাদেরকে শ্রদ্ধা জানানো যেমন আমাদের দায়িত্ব, ঠিক তাদের রক্তের বিনিমনে অর্জিত ভাষাকে তথা পুরো বাংলার সাহিত্য ও সংষ্কৃতিকে বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দেওয়াও আমাদের কর্তব্য। তবেই আমরা আমাদের প্রকৃত মর্যাদা ধরে রাখতে সক্ষম হবো।

একুশের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে বীর শহীদদের মতো দেশের কল্যাণে সব সময় নিয়োজিত রাখতে হবে আমাদের নিজেদের।। বিশ্বের বুকে সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গবেষণা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সামাজিক কর্মসূচি সহ সকল ক্ষেত্রে আমাদেরকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে হবে যাতে করে বিশ্ব দেখতে পারে বাঙ্গালী বীরের জাতি।বিশ্ব যাতে বুঝতে পারে, রক্তের বিনিময়ে হলেও বাঙালি জাতি তাদের আত্ম-মর্যাদা ধরে রাখতে সক্ষম।

শুধুমাত্র ২১শে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে নিজ দেশ ও ভাষার প্রতি মানুষের যে শ্রদ্ধাবোধ তা যদি প্রতিদিনই আমরা আমাদের হৃদয়ে ধারণ করতাম তাহলে দেশে অপসংস্কৃতি, অন্যায়, ভাষাগত দূর্বলতা বা সামাজিক ক্ষেত্রে আমাদের ছোট ছোট ভুলগুলো প্রতিরোধ করতে পারতাম। সেক্ষেত্রে এটা ধরে না রাখতে পারা আমাদের জন্য ব্যর্থতাই বটে।

তবে নিজ দেশের কল্যানের জন্য, নিজ দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য আমাদেরকে সামনের সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে তথা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, সামাজিক ক্ষেত্রে, সাংষ্কৃতিক ক্ষেত্রে, প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানে একুশের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে প্রতিদিনই আমাদেরকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এক রক্তিম সূর্যের মতো বাংলাদেশ গঠনে।

মোঃ আশরাফুল আলম

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।